“Astonished” is only suitable from the mouths of children. The city middle class calls Hefazat’s giant rally as “never before” or “first shock”– but this is a document of an amnesiac self-centered psyche. From this type of reaction, you cannot begin to understand the history of the practices of the pious in independent Bangladesh, nor the social reaction to the same. I do not have any desire to trivialize Hefazat as a platform or gathering. And I consider such impossible attempts by others as idiocy. Rather, it is the the middle class politics-desirous class’s habit of being “astonished” morning-noon-and-night that I find unbearable.[Translated excerpt, rest in Bengali]
হেফাজতে ইসলাম ও ক্যাজুয়াল মধ্যবিত্তের রাজনীতি-বাসনা
মানস চৌধুরী
হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ হবার প্রাক্কালে যদি মধ্যবিত্ত মানুষ ও মিডিয়া শঙ্কায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকেন, তাহলে ৬ মার্চ শাপলা চত্বরে তাদের সমাবেশটি হবার পর সেটি আতঙ্ক আর বিহ্বলতায় রূপ নিয়েছে। আমার মূল্যায়ন সরলীকৃত হবার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু গড়পড়তা মধ্যবিত্ত অভিব্যক্তি যদি আমার সরলীকরণকে চ্যালেঞ্জ করে যদি বিহ্বলতা ও আতঙ্ক কাটিয়ে ওঠেন তাহলে বরং দেখতে সেটা আরামেরই হবে আমার জন্য। বিহ্বলতা বা বিস্ময় শিশুদের চেহারায় যেমন মানানসই, বড়দের চেহারায় ততটা নয়। আতঙ্কিত অবস্থাও লাঞ্ছিতদের জন্য বরাদ্দ থাকা দরকার। যারা নগরজীবনের কেন্দ্রে অবস্থান করেন, যাদের নৈমিত্তিক কাজ হচ্ছে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক বিষয়াদির নীতিমালা বানানো, যারা পেশাগত ব্রত বিবেচনা করেন ‘দেশ ও জাতি’ নিয়ে চিন্তাভাবনা করার, সেই শহুরে মধ্যবিত্তের আতঙ্কও ভারি গোলমেলে, কিছুতেই সহমর্মিতা-জাগানিয়া নয়।
রচনাটি নিয়ে ভাবছিলাম হেফাজতে ইসলামের জন্মবৃত্তান্ত বুঝবার চেষ্টা করব। ভাবছিলাম সেটা করা ছাড়া এই উদ্দেশ্যমূলক রচনার অগ্রগতি সম্ভব নয়। কিন্তু কাজটা সহজ নয় একটুও। প্রাতিষ্ঠানিক ইতিহাস মোটেই সুলভ নয়, যা এবং যতটুকু পাওয়া গেল তা একেবারেই অনানুষ্ঠানিক। খুবই ভাসা ভাসা এবং একটা সমর্থ গোষ্ঠীকে বোঝার জন্য কোনো কিছু ঠিকমতো ঠাহর করা যায় না। বছর তিনেকের একটা হিসাব কয়েকজন দিচ্ছেন, যা নিয়ে আমি মোটেই পরিতৃপ্ত নই। অন্তত যে ধরনের সামর্থ্য ৬ এপ্রিলের সমাবেশে প্রদর্শিত হলো, সেটার সঙ্গে মানানসই কোনো ইতিহাস পাওয়া যায় না। নৃবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হিসেবে আমার কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে এসব সামাজিক ইতিহাস অনুধাবনে নিজেই ব্রতী হবার। একেবারে কেরানিসুলভ মাস্টারি করতে গিয়ে সেই কাজটা করা হয় না অন্য অনেক কিছুর মতো। দায়িত্ববোধটা পীড়িত করে, কিন্তু বিশেষ উপায় তৈরি হয় না। অন্য কোনো সুযোগে বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টারি করবার সংকট নিয়ে খানিক ফরিয়াদ এ দরবারে করার ইচ্ছে আছে। কিন্তু আজকের আলাপের ধারাবাহিকতায় সেই আহাজারি করা সঙ্গত হবে না। প্রসঙ্গটা এসেছে কারণ আসলেই এসব সামাজিক ইতিহাসের নাগাল আমাদের থাকা দরকার বলে। তা সে হেফাজতে ইসলামকে মিত্র জ্ঞান করলেও, প্রতিপক্ষ জ্ঞান করলেও।
কত লোক সমাগম হয়েছিল হেফাজতের সমাবেশে? এর উত্তর নানাবিধ, অভিসন্ধিমূলক। কিন্তু শহরের পাবলিক আলাপের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জিজ্ঞাসা হয়ে দাঁড়িয়েছে এটি। কখনো সান্ত্বনা খুঁজে পাবার জন্য তাঁরা প্রশ্নটি করেন পরস্পরকে। কখনো আতঙ্কটাকে পেলেপুষে রাখবার সম্ভাবনা থেকেই প্রশ্নটা করেন।
মধ্যবিত্ত রাজনীতি-ভাবুকগণ ঠিক করতে পারছেন না যে, এই বিশাল সমাবেশটাকে তারা বড় করে দেখবেন নাকি গৌণ করে দেখবেন। একাধিক টেলিভিশন চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করেছে যে জমায়েত, সেটির ভিজুয়াল আয়তন কিছুতেই গৌণ করে দেখার মতো লাগেনি তাদের। তার থেকে বড় কথা, তারাও জানেন যে হেফাজতের সমর্থকদের জন্য ঢাকা অভিযাত্রা দুর্গম ছিল। নানানভাবে তাদের অভিযাত্রা দুরূহ ছিল। হেফাজতের নানান দাবি পাত্তা না-দিতে পারেন কেউ। কিন্তু তাদের ঢাকা আসবার যাবতীয় উপায় যে অবরুদ্ধ ছিল সেটা সকলেই বুঝতে পেরেছেন। হেফাজত নেতৃবৃন্দ ঘোষণা দিয়েছিলেন যে তারা লংমার্চের পর ঢাকায় ৫০ লক্ষ লোকের সমাবেশ ঘটাবেন। যদ্দুর মনে পড়ে, দুয়েকজন নেতা পর্যায়ের লোক যানবাহনের অপ্রতুলতা টের পাবার পর, পরিবহন মালিক কর্তৃপক্ষের অনীহার মুখোমুখি হবার পর, আরও উদ্যমী হয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে সমাবেশটি কোটি লোকের হতে পারত। হয়তো অতিরঞ্জন সেটা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অহরহ টেলিভিশনে আসেন, আসতে পছন্দ করেন। তিনি আসেন বলে তার ভাবনা-অভিব্যক্তি আমরাও সরাসরি জানবার সুযোগ পাই। তিনি অকাতরে জানানও বটে। এদফা হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আগত লোকসংখ্যা তিনি জানালেন ৮৫ হাজার। তার তথ্যসূত্র তুলনামূলকভাবে অনেক পোক্ত হলেও এই সংখ্যাটিকেও নাতিরঞ্জনই মনে হয়েছে। সংবাদকর্মীদের অনেকে মনে করেছেন সংখ্যাটা তিন বা চার লাখ হবে। কিন্তু খুব সতর্কভাবে চিন্তা করলে পার্থক্যটা অনেক বেশি নয়। একটু আজব শোনালেও ৫০ লক্ষ আর ৮৫ হাজারের (৩ লক্ষের) পার্থক্য এই বিশেষ ক্ষেত্রে অনেক বড় কিছু নয়।
পার্থক্যটাকে আমি বড় করে দেখছি না, কারণ টেলিভিশনে প্রদর্শিত এই জনসমাবেশটি বিশেষভাবে মধ্যবিত্ত দর্শকের চোখ আর মননের জন্যই প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে সবচেয়ে বেশি আর তীক্ষ্ন ভাবে। মধ্যবিত্ত টিভিদর্শককুল শাপলা চত্বর আর তার আশপাশের রাস্তাগুলোকে জনাকীর্ণ দেখেছেন, এই সমাবেশকে প্রায় ‘ইতিহাসের বৃহত্তম’ গণ্য করে আচ্ছন্ন হয়েছেন, বা আতঙ্কিত। তারা সম্ভাব্য এক প্রতিপক্ষের সমাবেশ অবলোকন করছিলেন যাদের ‘নব-উত্থান’ (যদি তাই হয়) কুণ্ঠিত ও ভয়ার্ত করে তুলেছে নিজেদের। মধ্যবিত্ত দর্শককুল মনে মনে হিসাব করতে শুরু করেছেন যদি অবাধে হেফাজতের কর্মী ও সমর্থকরা ঢাকায় আসবার সুযোগ পেতেন তাহলে সমাবেশটার আকার কী হতে পারতো। সবচেয়ে পোক্ত সরকার-ভক্তও জানেন যে সমাবেশের জন্য অনুমতি দিয়ে যতই শিক্ষিতদের গাল ফুলিয়ে থাকুক সরকার, সমাবেশটি পণ্ড করবার সকল ধরনের তত্পরতাই ছিল। সেটার দায়দায়িত্ব সরকার নিতে চাক বা না-চাক, কিংবা পরিবহন কর্তৃপক্ষের ওপর চাপাতে চাক। ফলে শহরের উত্কণ্ঠিত শিক্ষিত টিভিদর্শককুল, যারা রাজনীতি নিয়ে মতামত দেন প্রচুর, নড়াচড়া করতে চান কম, দেখছিলেন এমন এক জমায়েত যেটা পুরোটা হয়ে সারেনি। তাদের কল্পজগত্ জুড়ে ছিল না-আসতে পারা সেই হেফাজত সমর্থকরা, যারা সমাবেশটিকে একটা বেসম্ভব আয়তনে নিয়ে যেতে পারতেন। এ এক নিষ্ঠুর জুজুবুড়ি। হেফাজতে ইসলাম অংশত সমাবেশটি করতে পেরে সেই জুজুবুড়িটিকে মধ্যবিত্ত শঙ্কার জগতে আপাত দীর্ঘস্থায়ী আসনে বসিয়ে দিতে পেরেছে। সমাবেশটি সকল অর্থে সফল।
তবে চারপাশের মানুষজনের কিছু প্রতিক্রিয়া আমার বিরক্তি তৈরি করছে তা স্বীকার করি। এর একটি প্রবল প্রতিক্রিয়া। গোড়াতেই যা বলেছিলাম বিস্ময় কেবল শিশুদের মুখেই মানায় ভালো। হেফাজতের এই সুবিশাল জমায়েতকে অভূতপূর্ব কিংবা ‘প্রথম চমক’ হিসেবে যে প্রচারণা করে চলেছেন শহুরে মধ্যবিত্তরা, সেটা বড়জোর বিস্মৃতিপরায়ণ আত্মমগ্নতার একটা দলিল। এই প্রতিক্রিয়া থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রে ধর্মানুরাগী চর্চার ইতিহাস, সেগুলোর সামাজিক প্রতিক্রিয়া, সংঘাত-সংশ্লেষ কিছুই অনুভব করা সম্ভব হয় না। একটা মোর্চা কিংবা জনসমাবেশ হিসেবে হেফাজতে ইসলামকে খাটো করবার কোনো অভিপ্রায় আমার নেই। আর অসম্ভব সেই প্রচেষ্টাকে আমি আহম্মকি মনে করি। বরং মধ্যবিত্ত রাজনীতি-বাসনাকারীদের সকাল-বিকাল হতভম্ব হবার অভ্যাসটা সহনীয় লাগে না কিছুতেই। সেই প্রসঙ্গ দিয়েই আলাপটা শেষ করব।
কিন্তু তার আগে ছোট্ট করে অন্য একটি প্রতিক্রিয়া নিয়ে অশান্তিটা ব্যক্ত করি। হেফাজতে ইসলামের এই মোর্চা আর সমাবেশকে বিপ্লবাত্মক বিবেচনা করে সেটাকে নিয়ে বিশ্লেষণ করছেন। এই দৃষ্টিকোণটি নিজ গুণে গুরুত্বপূর্ণ। এই ভাবনার বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মী সংখ্যায় যাই হোন, বিশ্লেষণগুলো ভাবানোর মতো। সবচেয়ে জরুরি বিষয় হচ্ছে, এই পক্ষে আছেন ফরহাদ মজহারের মতো প্রজ্ঞাবান মানুষ, যার সকল বিশ্লেষণ আমি উদগ্রীব হয়ে লক্ষ করি। তার পক্ষাবলম্বনের অধিকার নিয়ে কথা হচ্ছে না। এমনকি বিপ্লবাত্মকতা যে আমাদের চক্ষুর অন্তরালে নানান কোনায় সৃষ্ট হতে পারে সেই বাস্তবতা নিয়েও আমি ওয়াকিবহাল। অধিকন্তু, হেফাজতে ইসলাম প্রতিনিধিত্ব করে এমন সব সামাজিক বর্গকে যাদের অনেকেই সম্পদের বিচারে, নৈতিক দখলদারিত্বের দিক থেকে, অনেক নিগৃহীত সামাজিক জীবন যাপন করেন— এই উপলব্ধি করাও খুব জরুরি। কিন্তু যদি হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধ পক্ষকে বিদ্বেষের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়, কোনো সুযোগ নেই হেফাজতের বিদ্বেষগুলোকে না খেয়াল করবার। আর সেটা কিছুতেই দুই মাসের মাত্র ঘটনা নয়, এর একটা লেগ্যাসি আছে। আর রাষ্ট্রের বুর্জোয়া অর্জনগুলোকে (যদি আদৌ কিছু থেকে থাকে) লোপাট করে দেবার যে ঘোষণা, সেটাকে বিপ্লবাত্মক ধরে নেবার ভিতরে তাত্ত্বিক অবসেশনটা বড় হয়ে দেখা দেয়। ভারি অনারামদায়ক। সরকার নানাবিধ অন্যায্য কাজ করছে বলেই হেফাজতকে বিপ্লবী পক্ষ গণ্য করা একেবারে স্বার্থসংশ্লিষ্ট। প্রগতিবাদের বৈশ্বিক সমালোচনা খুবই জরুরি ছিল। কিন্তু নানাবিধ স্থানীয় স্বার্থ-পকেট যে তা তৈরি করে দিয়েছে, সেটা উপলব্ধি করা দরকার। এই কথাটাও মানা দরকার হয়ে পড়েছে যে, নিরপেক্ষতার খোসাটা সরিয়ে স্বার্থ নিশ্চিত করতে পারাই এই মুহূর্তের বাংলাদেশের মুখ্য তাগিদ।
বলছিলাম মধ্যবিত্ত রাজনীতি-বাসনাকারীদের সকাল-বিকাল হতভম্ব হবার অভ্যাস নিয়ে। এত বিহ্বলতা নিয়ে কেন যে তারা রাজনীতি নিয়ে বাসনাকাতর হন! হয়তো হন এজন্যে যে, তারা যেরকম আরামে থাকতে পছন্দ করেন সেটার কোনোরকম ব্যত্যয় তারা বরদাশত করতে পারেন না সেজন্য। ব্যত্যয়ের সম্ভাবনাতেই তারা বিহ্বল হয়ে পড়েন। এও হতে পারে যে, গায়ে-গতরে যেসব পরিশ্রম করলে পরিশেষে রাজনৈতিক মানচিত্রে জায়গা দখল করা সম্ভব সেই পরিশ্রমে তারা কাতর। তাদের হয়ে কাজটা সরকার আর মিডিয়া করে দিলেই যেন ভালো হয়! কিংবা এই মুহূর্তের বাংলাদেশে শাহবাগ জাগরণের কর্মীরা। কিন্তু বাস্তব সামাজিক জীবন এরকম বাসনা দিয়েই বদলে যায় না। হেফাজতে ইসলামের সাম্প্রতিক উত্থানপর্বে যারা হতভম্ব হয়েছেন, তাদের আসলেই বাংলাদেশের চিন্তাভাবনার ইতিহাস যেমন মনে রাখা দরকার ছিল, তেমনি সম্পদ ও অধিকারের যে বিস্তর অসম বণ্টন সেটাও খতিয়ে দেখার অভ্যাস করা দরকার ছিল। তারা করেননি। শেষেরটা হয়তো খানিক কঠিন। কিন্তু প্রথমটাও নয় কেন?
এরশাদ যখন রাষ্ট্রধর্ম বিল পাস করেন, ঢাকার রাস্তায় তাত্ক্ষণিক প্রতিবাদ করেছিলেন নারীকর্মীরা। কীসের ভরসায় এরশাদ এই বিল পাস করেছিলেন? সেটা অনায়াসে বোঝা গেল যখন নারী প্রতিবাদকারীদের ধমকধামক দেবার জন্য ‘এরশাদভক্ত ধর্মানুরাগী’রা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জমায়েত হয়েছিলেন। অধ্যাপক আহমদ শরীফ কিংবা উত্তরকালে তার শিক্ষার্থী অধ্যাপক হুমায়ূন আজাদকে মুরতাদ ঘোষণার সময়কার অপেক্ষাকৃত স্বল্প জমায়েতগুলো যদি ভুলে গিয়েও থাকেন সবাই, তসলিমা নাসরিনকে হত্যার হুমকি দেয়া জমায়েত তো ভুলবার কথা নয়। কত বছর আগে? কী এমন প্রতিরোধ সেই অবস্থায় করা হয়েছিল? কিংবা তার পরে? নারী নীতি ঘোষিত হবার পর বিশাল জমায়েতে কি ধর্মানুরাগীরা প্রতিবাদ করেননি? এই নীতি বাতিলের ধামকি দেননি? গার্মেন্টশিল্পে নারী শ্রমিক নিয়োজিত হবার পর মুনাফা নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য না করলেও নারীর পাবলিক উপস্থিতি নিয়ে কি গোস্বা করেননি তারা? টেলিভিশন ও বিজ্ঞাপন কারখানা বিকশিত হবার পর পণ্য উত্পাদন প্রক্রিয়া কিংবা ভোগপ্রণালী নিয়ে তাদের সায় থাকলেও নারীর পর্দা উপস্থিতি নিয়ে সংক্ষুব্ধ কি তারা হননি? সেগুলো ভুলবার মতো কী হলো? কেন এত অনায়াসে ভুলে যান সবাই? শুধু মিডিয়াতে যা যা উপস্থিত তাই তারা মনে রাখতে পারেন? মিডিয়া-অনুপস্থিত সব মিথ্যা? নাকি তা নিয়ে ভাবার দরকার নেই? এই বিস্মৃতিপরায়ণ, আত্মমগ্ন মানুষজন কোনো রাজনৈতিক প্রক্রিয়াতেই কি কাজে আসবেন?
হেফাজতে ইসলাম একটা মোর্চা। হয়তো একটা শিথিল মোর্চা। হয়তো ধর্ম, জীবনাচরণ আর প্রতিপক্ষতার প্রশ্নে শৈথিল্যই এই মোর্চার শক্তি। অন্তত আমি তাই মনে করি। কিন্তু এই মোর্চাটিকে হঠাত্-উত্থিত দেখার কোনো সুযোগ নেই। মধ্যবিত্ত বাসনাতে যদি এই বর্গের সঙ্গে রাজনৈতিক-সামাজিক সংমিশ্রণের কোনো আগ্রহ না-থাকে তাহলে অবশ্যই সমস্যাটি তাদের। এমনকি যদি মোর্চাটিকে উচ্ছেদ করবার সাধ হয়, তাতেও কাজটি রাষ্ট্র আর সরকার করে দেবে না। কেন দেবে? এরকম বিবদমান পক্ষ কি শাসকেরা চান না? আর বাস্তব হচ্ছে উচ্ছেদ চিরকালই ঝুঁকিপূর্ণ উপায়; ন্যায্যতার প্রশ্ন বাদ দিলেও। আর কাজটা অলস টিভিপ্রিয় মধ্যবিত্তের কাজ নয়। সেটা বুঝতে পারলে ভালো। ফলে হেফাজতের উছিলায় ধর্মানুরাগী, পিতৃতান্ত্রিক, সংরক্ষণমনস্ক এবং মোটের ওপর নিগৃহীত এই বর্গের সঙ্গে সামাজিক-রাজনৈতিক সংমিশ্রণ ছাড়া মধ্যবিত্তের সামনে কোনো উপায় নেই।
কিন্তু দায়িত্বটা কেবল গত সপ্তাহেই দেখা দেয়নি। দায়িত্বটা ছিলই। অনেক দিন ধরে। অলস ডিনায়ালের রোগে দায়িত্বটা এড়ানো হয়েছে মাত্র। টিভি পর্দা থেকে হেফাজত অপসৃত হলে আবার সেই আগের মতোই হবে। সম্ভবত!
[উত্তরা ১১ এপ্রিল ২০১৩]
অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়