By Kabir Suman for AlalODulal.org
In the 80s Kabir Suman was working as a journalist for the Voice of America, under the Reagan administration. This is an inside view from those times as he retraces the genesis of the rise of Taliban. This was written in the wake of the senseless heinous act of Tehreek-e-Taliban Pakistan in Peshawar where they killed innocent school children in an army school.
THE PIECE IS IN BANGLA.
Though it is not directly related to Bangladesh (Alal O Dulal’s primary readership), certain events touch us globally, and needs universal attention, they affect us directly and indirectly. This article is connected, if not overtly, but inherently to the geo-politics of South Asia, which includes Bangladesh, and global politics’ bearing on these parts of the world — the bitter taste of this kind of politics still has residues on Bangladeshi tongues since the nation’s birth when the US politics, policies, and diplomacy affected Bangladesh gravely, and by extension India who was perhaps Liberation War’s only ally. Indeed it is connected by the article’s prism on Pakistani military, US influence, and militancy in the name of religion, funded, aided, trained by the superpower to further their agenda. Pakistan’s the then army establishment played a huge role in aiding USA raise the Taliban during that Cold War era of superpower oneupmanship. History is strange, it reaps what we sow. It is not an inert thing out there. It is what we make of it.
The future will depend on what we make of the history in making now, in Bangladesh, in it’s neighbourhood, and indeed the world. And, we would add, that such machinations, as done by the US, which this article discusses, has even affected a whole religion, Islam.
— Editor’s note.
এক শীতের সকালের ভাবনা –
বয়স হলে শীতকালটা নেওয়া কষ্টকর। সকাল থেকেই মনে হয় কচ্ছপ হয়ে যাচ্ছি। কথায় কথায় ঠাণ্ডা লাগে। স্মোকার্স কাশিটা বেড়ে যায়।
অবশ্য, শীতকাল না হলেও কচ্ছপ হয়ে যাওয়ার ইচ্ছেটাই হয়তো ক্রমশ পেয়ে বসত – চারদিকে যা অবস্থা। পশ্চিমবঙ্গে রোগা-রোগা কালো-কোলো (আমার বাংলার রঙেরই) দরিদ্র গ্রামবাসীরা জঙ্গি হয়ে উঠছেন, কাঁখের বাচ্চা সামলাতে সামলাতে আল-কায়দার সেনাপতি না কার যেন স্ত্রীর কাছে গিয়ে কালাশনিকভ এসল্ট রাইফেল চালানোর ট্রেনিং নিয়ে এসে বাড়ি ফিরে আবার গম্ভীর মুখে কুটনো কুটছেন গ্রামবাংলার বধূরা; ছেলেমেয়েরা মাদ্রাসায় গিয়ে বাকুনিন-এর আরবি অনুবাদ (এটা আমি লিখলাম – বাকুনিন নামটা কলকেতার দুই প্রধান আল্-আর-এস-এস পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলি আর জানেন বলে মনে হয় না) আর আরবি ভাষায় লেখা ভারতবিরোধী জঙ্গি ম্যানিফেস্টো পড়ে মুখস্ত করছেন এবং যে যার এলাকায় মৌলবী সাহেবদের কাছে মাঝরাতে চুপিচুপি গিয়ে পড়া মুখস্ত বলছেন; মুর্শিদাবাদ জেলাটি যে সবচেয়ে মুসলিমপ্রধান জেলা তা কলকেতায় বেরোনো এক মর্তমান পত্রিকা জানতেন না তাই ধরে নিয়েছেন যে সারা বিশ্বের মুসলমান জঙ্গিরা সেই জেলায় এসে ভীড় জমাচ্ছেন – এবং বিশেষ সূত্রে জানা যাচ্ছে যে আর কিছুদিনের মধ্যেই এখানে হিন্দুদের আর ঠাঁই হবে না – শুধু মুসলমানরা থাকবেন; অন্যদিকে রাজধানিতে গীর্জায় আগুন; এক বিজেপি নেতা ঘোষণা করছেন মহাত্মা গান্ধীকে যিনি খুন করেছিলেন সেই নাথুরাম গড্সে দেশপ্রেমী…ইত্যাদি ইত্যাদি।
অন্যদিকে, আবার তালিবান।
গত শতকের আটের দশকের প্রথম থেকে যদি ভয়েস অফ আমেরিকার বাংলা বিভাগে চাকরি না করতাম, কতো কী যে জানা হতো না। আমাদের কাজের বেশিরভাগটাই ছিল ভি ও এ’র সাহেব লেখক-সাংবাদিকদের অমৃতবাণী অনুবাদ করে তা স্টুডিয়োয় গিয়ে লাইভ পড়ে দেওয়া বা রেকর্ড করা – যাতে তা পরে সম্প্রচার হয়। সাংস্কৃতিক বিষয়ে আমাদের অল্পস্বল্প স্বাধীনভাবে কিছু লেখার অধিকার ছিল। সেখানেও – ওরে বাবা, রনি রেগানের আমল – একটা American Angle আনতে হতো। যে কোনও দেশেই সরকারি বেতারে চাকরি করলে এই ধরণের অভিজ্ঞতাই হয়ে থাকে।
আফগানিস্তানে সোভিয়েত বাহিনী আস্তানা গাড়ল। সারা দুনিয়ায় হৈচৈ। বেশিরভাগ দেশই বললেন – এ ভারি অন্যায়। ঠিকই। হঠাৎ অন্য দেশ দখল করবে কেন? – আমরা ওয়াশিংটন ডিসির স্টুডিয়োয় বসে মার্কিন লেখক-সমীক্ষকদের লেখা জ্বালাময়ী সব রিপোর্ট ও কমেন্টারি দ্রুত অনুবাদ করে সম্প্রচার করতে লাগলাম। হিন্দি বিভাগে আমার এক বন্ধু ছিলেন – উমেশ অগ্নিহোত্রী, উর্দু বিভাগে ছিলেন বন্ধু আরিফ আরিফ। দুজনেই একদিন কফি খেতে খেতে দ্বৈতকন্ঠে ককিয়ে উঠলেন, “সুমন-ভাইয়া, ইয়ে কঁহা ফঁস্ গয়ে।” – ওদিকে খোদ মার্কিন সরকার কিন্তু নিকারাগুয়ায় নাক গলাচ্ছেন, সানদিনিস্তা বিপ্লবকে ধ্বংস করতে চেষ্টা করছেন প্রতিবিপ্লবীদের কোটি কোটি ডলার সাহায্য দিয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবৈষম্যবাদী সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গ সরকার যা খুশি তাই করছেন, ওয়াশিংটন নিরব। ইস্রায়েল আপন মনে প্যালেস্টাইনের উদ্বাস্তু শিবিরে বিমান হানা চালাচ্ছেন, নিরীহ নিরপরাধ মানুষ মারা পড়ছেন। ওয়াশিংটন নিরব। আমরা অনুবাদ করে করে মাইকের সামনে উগরে দিচ্ছি – পি এল ও আর সান্দিনিস্তা সরকার গণতন্ত্রবিরোধী, সন্ত্রাসবাদী। দক্ষিণ আফ্রিকার সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গ সরকার কিন্তু গণতন্ত্রী। ফিদেল কাস্ত্রোর কিউবার কাজ কী? ” সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছ থেকে বিপ্লব জোগাড় করে এনে তার বিষ মধ্য আমেরিকায় ও ক্যারিবিয় অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়া।
সোভিয়েত বেতারে একদিন শোনা গেল এক সোভিয়েত বেতারকর্মী আবেগকম্পিত গলায় জানান দিচ্ছেনঃ “আফগানিস্তানে সোভিয়েত দখলদারির বিরুদ্ধে দুনিয়ার মানুষ গর্জে ওঠো।” – সকলে স্তম্ভিত। বলে কী লোকটা? এ তো বাঘের ঘরে ঘোঘের বাসা। – কয়েকদিন আর তাঁর কণ্ঠ শোনা যায়নি। তারপর আবার শোনা গেল। জগৎবাসীদের প্রতি তাঁর সেই উদাত্ত আহ্বান অবশ্য আর শোনা যায়নি।
আমাদের প্রান্তে সাহেবরা বললেন – লোকটাকে দিন সাতেক সাইকোলজিকাল চিকিৎসায় রাখা হয়েছিল। – তা হোক, কিন্তু আফগানিস্তানে সোভিয়েত দখলদারির বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগে গেলেন মার্কিন সরকারের নেতৃত্বে আরও কিছু পশ্চিমে দেশ। এইসব ব্যাপারে “এগালিতে ফ্রাতার্নিতে” আউড়ানো ফ্রান্স বরাবর তৎপর। ইটালিও। তখনকার পশ্চিম জার্মানি তো হাতের পুতুল।
তালিবান। তালিবান নামে কোথাও কিছু ছিল কি?
পাকিস্তানে এক পা রেখে ওয়াশিংটন ও তার পশ্চিমে স্যাঙাতরা কোটি কোটি টাকা ঢালতে লাগলেন – আফগানিস্তানের “ওয়ারলর্ড”বৃন্দ, যত রাজ্যের খুনে-বোম্বেটে সকলকে একজোট করে আধুনিক অস্ত্র ব্যবহারের ট্রেনিং দিতে। নন্দীগ্রাম অভ্যুত্থানের সময়ে যে নামটি এ-রাজ্যে বাংলা ভাষায় চালু হয়ে যায় সেই ‘হার্মাদ’ নামটি সেই সময়কার আফগান দস্যুদের বেলা চমৎকার খাটে। আমরা ভি ও এ’র অফিসে ঝটাপট তর্জমা করতে লাগলাম মার্কিন সাহেবদের লেখা: “আফগানিস্তানে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকামী যোদ্ধারা জেগে উঠছেন, সংগঠিত হচ্ছেন।” – ওয়াশিংটন সরকার সেই হার্মাদদের বলতে লাগলেন মুক্তিযোদ্ধা।
নন্দীগ্রামের আন্দোলনকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে তখনকার শাসকদল-সংগঠিত হার্মাদদের যেমন আলাদা কোনও বিশ্বাস বা মতবাদ ছিল না, তারা যেমন শুধু একধার থেকে খুনজখম ও ধর্ষণ করার কাজেই ব্রতী ছিল, আফগানিস্তানের হার্মাদরাও তেমনই। তারা ধর্মে মুসলমান। কিন্তু তাদের একজনও, বিশেষ করে সাধারণ বোম্বেটেরা, অর্থাৎ যোদ্ধারা, জীবনে কখনও একখণ্ড কুরআন শরীফ হাতে নিয়েছিলেন কিনা সন্দেহ। পাশ্চাত্য-নেতৃত্বাধীন সেই বোম্বেটে আফগান “মুক্তিযোদ্ধাদের” মনে মতবাদগত মগজ-ধোলাই-এর সাহায্যে ইসলামের এক বিকৃত রূপকে কায়েম করে দেওয়া হয়। এটা ছিল যুদ্ধপরিচালকদের ঘোষিত রণকৌশলের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক। – জন্ম দেওয়া হলো তালিবানদের। তালিবান। পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদী ও প্রভুত্ববিস্তারবাদী অভিসন্ধিকে আফগানিস্তানে এবং কিছুটা হলেও পাকিস্তানের এক অংশে কায়েম করা ও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ইসলাম ধর্মের এক কুৎসিৎ প্যারোডি বানিয়ে সেই উদ্ভট এককাট্টাপনার ভিত্তিতে বেশ কিছু সংখ্যক অশিক্ষিত, আধাবর্বর, সভ্য সমাজের সঙ্গে সম্পূর্ণ সংশ্রবহীন সম্পর্কহীন প্রায় জান্তব বোম্বেটেদের মানসিক ও সামরিকভাবে তৈরি করা হলো মার্কিন সরকার ও তাঁদের স্যাঙাতদের নির্দেশে। মনে রাখা দরকার ওসামা বিন লাদেনেরও রঙ্গমঞ্চে প্রবেশ মোটামুটি ওই সময়ে। তিনিও ছিলেন এক হার্মাদ-ঠিকেদার। নিজে হার্মাদ ছিলেন না। নানান দেশে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ও ব্রিটেনে ব্যবসা।
তালিবানদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হতে থাকল পাকিস্তানে। এইভাবে মার্কিনভজা পাকিস্তানেও তালিবানদের আস্তানা হলো। পাকিস্তানের কিছু মাদ্রাসায় এককাট্টা (মৌলিকভাবে ইসলামের আদর্শবিরোধী) মতবাদগত পন্থায় জঙ্গি প্রশিক্ষণ শুরু হয় ঐ সময়ে। তার আগে কস্মিনকালে ‘মাদ্রাসা’ নামক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জঙ্গিতালিমের কোনও সম্পর্ক ছিল না। মানবেতিহাসে কোথাও তার কোনও নজির নেই। এই চমৎকার কাজটির মন্ত্রদাতা ও অর্থদাতা কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আজ্ঞাবহ – পাকিস্তানের মূর্খ সামরিকশাহী। পাকিস্তানে তার প্রভু ওয়াশিংটনের নির্দেশে ও টাকায় তালিবানদের সামরিক ও মতবাদগত তলিমের পরিণামে পাকিস্তানের পশ্চাদ্দেশে যে কী কী প্রবিষ্ট হয়েছে এবং হয়ে চলেছে তা সবচেয়ে ভাল জানে পাকিস্তান। কারণ তালিবানের মেওয়া আফগানিস্তানে যেমন ফলেছে, তেমনি পাকিস্তানেও। একের পর এক তালিবানি হামলা হয়েছে পাকিস্তানে। সাম্প্রতিকতম নৃশংসতা আমরা এই দেখলাম। কিন্তু দেখুন – এই সব কিছুর নান্দীকার মার্কিন সরকার ও তাঁদের অন্যান্য শ্বেতাঙ্গ স্যাঙাত দেশগুলো কেমন তোফা আছে।
সোভিয়েত মদতপুষ্ট নজিবুল্লাহ্ সরকারকে (সমাজতন্ত্রী সরকার) উৎখাত করেছিল তালিবানরা। আমরা ওয়াশিংটনে মাইকের সামনে বসে বসে প্রায় জয়ধ্বনি দিয়েছিলাম। নজিবুল্লাহ্ সরকার সোভিয়েতভজা। কিন্তু তাঁদের আমলে আফগানিস্তানের মেয়েরা সবচেয়ে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতেন। কাবুলের মন্ত্রীসভায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আফগান মহিলা ছিলেন – আবিশ্ব গণতন্ত্রের অভিভাবক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যা প্রায় কখনও হয়নি। সরকারি দপ্তরগুলোয় মহিলারা অতীতের তুলনায় অনেক বেশি চাকরি পেয়েছিলেন। ইসলাম ধর্ম স্বাভাবিকভাবেই পালিত হতো, কিন্তু তা নিয়ে বাড়াবাড়ি ছিল না, গা-জোয়ারি ছিল না। নজিবুল্লাহ্র শাসনকালে দেশে শান্তিশৃঙ্খলা ছিল। আর পাঁচটা দেশের মতোই আফগনিস্তানে জনজীবন অনেক স্বাভাবিক হয়ে ঊঠেছিল।
রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে তালিবানরা প্রথমেই নজিবুল্লাহ্ ও তাঁর ভাইকে ধ’রে প্রকাশ্যে তাঁদের অণ্ডকোষ কেটে নেয়। চারপাশে দাঁড়িয়ে উল্লাস করছিল তারা, যাদের আমরা ওয়াশিংটনে ভি ও এ’র স্টুডিয়োর মাইকের সামনে বসে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ বলে এসেছিলাম। তাদের প্রত্যেকের হাতে ছিল মার্কিন সরকারের টাকায় কেনা এসল্ট রাইফেল ও গ্রেনেড লঞ্চার। দুই ভাইকে তারপর প্রকাশ্যে, তালিবান-নির্মিত ফাঁসিকাঠে ঝোলানো হয়। অন্তত এক সপ্তাহ দুজনের মৃতদেহ ঐভাবে ঝুলেছিল। সারা পৃথিবী দেখেছে। সারা দুনিয়ার ফোটোগ্রাফররা সেই ছবি তুলেছিলেন। ভিডিও-ও তোলা হয়েছিল। – তালিবানদের জন্মদাতা, পালক, মন্ত্রদাতা, অর্থদাতা, অস্ত্রদাতা, খাদ্যপানীয়দাতা মার্কিন সরকার ও তাঁদের বন্ধুরা তখন কী করছিলেন?
তার পর থেকে তালিবানরা যা যা করেছে সেই বর্ণনার অতীত নিষ্ঠুরতার জন্য আসলে কারা দায়ি? কাবুলে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর থেকেই তালিবানরা লেগে গিয়েছিল তাদের কাজকর্মে। বাপের জম্মে যারা কোনও স্বাভাবিক শিক্ষা পায়নি, যাদের ডেরা ছিল আদিম পরিবেশে, যাদের মনমানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে মানবসভ্যতার কোনও সম্পর্ক কোনওদিনই ছিল না, যারা পুষ্ট হয়েছিল শুধু নৃশংসতায়, জীবন বলতে যারা জেনেছিল শুধু হানাহানি লুঠতরাজ ধ্বংসসাধন, যাদের একজোট করা হয়েছিল কোটি কোটি মার্কিন ডলার খরচ করে সোভিয়েত বাহিনীকে আফগানিস্তান থেকে তাড়ানোর লক্ষ্যে তাদের কাছ থেকে আমরা কী আশা করব? – রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার পর তারা যখন যথেচ্ছাচার শুরু করল, তাদের পশ্চিমে জন্মদাতারা কি একবারও চেষ্টা করেছিলেন তাদের থামাতে? মানুষ তো সেরকম অবস্থায় মরিয়া হয়ে গিয়ে যুদ্ধও করে থাকে। ইতিহাসে ভুরি ভুরি নজির। “নাইন ইলেভেনের” পর ওয়াশিংটন লাদেন-মারো অভিযান শুরু করেছিল। তালিবানদের অপরিসীম নিষ্ঠুরতা ও যথেচ্ছাচারের নজির সমানে দেখার পর ওয়াশিংটন তাদের নির্মূল করার জন্য ব্যাপক আক্রমণ করেছিল কি? ইরাককে তো পিষে দিল আমেরিকা। ইরাণের সঙ্গে খাপ খুলল না হেরে যাওয়ার ভয়ে। তালিবানদের রেখে দিল সাহেবরা। কেন?
বন্ধুরা, হয়তো আপনারা পড়েছেন, তাও বলি – Edward W Said- এর ‘Covering Islam’ ও ‘Orientalism’ বইদুটি কয়েকটি জরুরি ব্যাপার বুঝতে সাহায্য করতে পারে।
আমরা চাই বা না চাই দুনিয়াটা বড় উদ্ভটভাবে সাদা কালো। শ্বেতাঙ্গরা কোনওদিন ইসলামি দুনিয়া, আমাদের উপমহাদেশ ও চীনের ভাল চায়নি। তার চেয়েও যা গুরুত্বময়: পৃথিবীর এই বিপুল অঞ্চলটিকে তারা মোটের ওপর অসভ্যই ভেবে এসেছে দীর্ঘকাল। তাদের “সভ্যতার” মাপকাঠির সঙ্গে যা যা মিলছে না সেটা বা সেগুলো “সভ্যতার” আওতায় পড়ছে না। হিন্দুত্ববাদীরা যদি ভেবে থাকেন শ্বেতাঙ্গ প্রভুরা মুসলমানদের ওপর খাপ্পা, হিন্দুদের ওপর নয়, তো তাঁরা ভুল করছেন বেজায়। শ্বেতাঙ্গ প্রভুদের কাছে “হিন্দু” “মুসলমান” কিছুই তাঁদের সভ্যতার সঙ্গে খাপ খায় না, অতএব খারাপ। – তালিবানদের তারা রেখে দিল ঝামেলা পাকিয়ে রাখার লক্ষ্যে। তাদের হাতে আধুনিক অস্ত্র, রকেট লঞ্চার সবই তুলে দিল। হয়তো এখনও সাপ্লাই আসে। পাকিস্তানের শাসকরা গবেট। সামরিকশাহী বারোটা বাজিয়ে দিল। মেরিবাবার ভজনা করতে গিয়ে খাল কেটে যে কুমির আনল মূর্খরা তাতে তো নিজেদেরই গেল-গেল দশা। তার মর্মান্তিক নজির আমরা দেখতে পাচ্ছি বারবার। সাহেবরা কী করছেন? তালে আছেন – আমাদের মধ্যে আর কোন্ কোন্ উপায়ে গোলমাল পাকানো যায় ও পাকিয়ে রাখা যায় তা সমানে যাচাই করে দেখতে।
জীবনের এই শেষ পর্যায়ে পুরোনো দিনের কত কথা মনে পড়ে গেল। ইতিহাসের একটি অধ্যায়ের সাক্ষী ছিলাম আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি রাজধানী ওয়াশিংটন ডি সিতে ভি ও এ’র চাকরি করার সুবাদে। আমেরিকার সরকারবিরোধী সংগ্রামীরাও আমায় তালিম দিয়েছিলেন, যাঁদের অনেকেই আজ আর নেই। তবু নম চমস্কি আছেন। কতো জরুরি সাবধানবাণী তিনি শুনিয়ে এসেছেন সেই কোন্ কাল থেকে। দুনিয়ার কজন শুনেছে?
কচ্ছপ হয়ে যাচ্ছি…
শীত করছে।
এরই মধ্যে, এতো উদ্ভট বিচ্ছিরি সব ব্যাপারের মধ্যেও আমায় সাহস দিচ্ছে বেদব্রত পাইনের ‘চিটাগং’ ছবিটির স্মৃতি। আমায় দখল করে রেখেছে ছবিটা।