1. Firoz Ahmed: “শুধু লোভ! বিজ্ঞানীদের এই কারণেই সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কেও কিছু ধারণা থাকা দরকার। লোভেরও ব্যকরণ আছে, নিয়ম-কানুনের উর্ধে সে নয়।”
2. Zafar Iqbal: “কারা প্রশ্নফাঁস করছে তাদের কখনো ধরা যায়নি, কিন্তু কারা গাইড বই থেকে প্রশ্ন নিয়ে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন প্রণয়ন করেন তাদের ধরতে তো কোনো সমস্যা নেই!”
জাফর ইকবালের লেখার জবাব দিয়েছে ফিরোজ আহমেদ। ২টি লেখা একসাথে পরিবেশিত হচ্ছে আলাল ও দুলাল-এর সৌজন্যে
লোভেরও ব্যকরণ আছে
– ফিরোজ আহমেদ, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন
‘দেশের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার সর্বনাশ করলো কে’ শিরোনামে মুহম্মদ জাফর ইকবাল প্রধানত দায়ী করলেন গাইডবই ব্যবসায়ীদের। তাদের লোভের বলি হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা, ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা, এমনকি নোট বই বন্ধ করার জন্য যে সৃজনশীল পদ্ধতি আবিষ্কার করা হলো, সেটাকেও মুক্ত করা গেলো না এই থাবা থেকে, মোটামুটি এই হলো তার সিদ্ধান্তসমূহ।
শুধু লোভ! বিজ্ঞানীদের এই কারণেই সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কেও কিছু ধারণা থাকা দরকার। লোভেরও ব্যকরণ আছে, নিয়ম-কানুনের উর্ধে সে নয়। সমাজধ্বংসী লোভের উৎপত্তি খোঁজা সম্ভব, তার নিরাময়ও সর্বাংশে না হলেও গ্রহণযোগ্যমাত্রায় নামিয়ে আনাও কঠিন না। নোটবই-গাইড বইয়ের চাহিদা কেন তৈরি হলো, এত এত আইন তৈরি করেও কেন এগুলো বন্ধ করা গেলো না, সে বিষয়ে লেখক কি কিছু ভেবেছেন? কিছু প্রাথমিক ভাবনার রসদ দেয়া যাক:
১. কোন একটা পণ্য কেন বাজারে চালু থাকে? চাহিদা আছে বলেই। বিদ্যালয়ে যথাযথ শিক্ষা দেয়া হলে গাইড বই ধরার কি দরকার পড়তো শিক্ষার্থীদের?
২. তো শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে কেন যথাযথ শিক্ষা পান না? সম্ভবত তিনটে প্রধান কারণ আছে। এক, শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে পড়ান না, বাড়িতে আসতে বলেন। দুই, শিক্ষকরা যোগ্য নন। তিন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ভয়াবহ রকমের বেশি।
শিক্ষকরা বাড়িতে পড়তে আসতে বলেন কেন? আইন করে কি তা বন্ধ করা যাবে? কখনো যাবে না, যতক্ষণ না আইন মেনে মোটামুটি সম্মানজনক জীবিকা তারা তারা অর্জন করতে পারছেন। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার সবচে বড় সর্বনাশ যদি কেউ করে থাকে, সেটা সকল শিক্ষামন্ত্রী কিংবা অর্থমন্ত্রীরা, যারা শিক্ষকদের জন্য এমন বেতন নির্ধারণ করে আসছেন যুগ যুগ ধরে যে কোন যোগ্য ছেলে-মেয়ে শিক্ষক হবার কথা ভাবতে পারে না। যদি কেউ তা হনও, আর্থিক চাপে তাদের অধিকাংশের নৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে যায়। তারা আত্মসমর্পণ করেন। যতদিন না এমন বেতন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের জন্যও নির্ধারিত না হবে যে সবচে যোগ্য ছেলেমেয়েরা শিক্ষকতায় আসছেন, ততক্ষণ শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির কথা কল্পনাই করা যাবে না।
আর্থিক দুরাবস্থার স্বাভাবিক ফলাফল হলো খুব সম্ভবত দেশের অধিকাংশ শিক্ষক শিক্ষা প্রদানের উপযুক্তই নন। মফস্বলে যাওয়া আসা আছে, এমনকি শহরের বিদ্যালয়গুলোতেও, শিক্ষকদের মানের ভয়াবহতা না খেয়াল করে পারবেন না। এমনকি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এখন অনুদান নিয়ে যেমন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়, তেমনি অনুদান নিয়ে বাড়ির বসে থাকা সদস্যদের, পুত্র, মেয়ের জামাই, পুত্রবধু ইত্যাদিকে শিক্ষকতা পেশা জুটিয়ে দেয়ার ভয়ানক এক প্রবণতা শুরু হয়েছে মফস্বলে। এই শিক্ষকরা কি করে ব্যকরণ বা গণিত, রসায়ন বা পদার্থবিদ্যা বোঝাবেন? কি করে ভুগোল বা ইতিহাসে আগ্রহী করবেন শিক্ষার্থীদের?
শিক্ষার্থী শিক্ষক অনুপাতটাও পড়াবার অনুকূল নয় বহুক্ষেত্রে। অবশ্য জনপ্রিয় শিক্ষকদের ব্যক্তিগত পাঠদানেও ব্যবসাতেও দেখা যাবে চল্লিশ পঞ্চাশ জন উপস্থিত!
৩. তাহলে যে ব্যবস্থায় আপনি প্রায় সকল শিক্ষার্থীকে ধরেবেধে এমন দশার মাঝে ফেললেন যেখানে মুখস্ত করাই একমাত্র উপায়, সেখানে নোটবই গাইড বইয়ের রমরমা খুবই সঙ্গত এবং স্বাভাবিক। এখানে নানান নিয়মকানুন জারি করা কিংবা এই ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কামান দাগানো সামান্যই উপকারে আসবে।
৪. আরও ছোটখাট কিছু বিষয়। অধিকাংশ বিদ্যালয়ে কোন খাবার দেয়া হয় না শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীদের বিষয় বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি খিদে পেটে কোন পড়া তার বুদ্ধিতে কুলোয় না, অতএব মুখস্তই অবলম্বন হয়। ঢোকে না। হয়তো এই কারণেই সভ্য দেশগুলোতে বাচ্চাদের খাবারের বন্দোবস্ত করা হয়।
৫. খুব সম্ভবত আমাদের বিদ্যালয়ে ছেলেমেয়েদের দৈনিক কাটানো সময়ের পরিমানও বাড়ানো দরকার। তার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য বিরতি এবং খেলাধূলার ব্যবস্থা করা দরকার। একই বিদ্যালয়ে সকাল বিকাল দুই দফায় দুই দল শিক্ষার্থীকে পড়ানো সম্পদের সীমাবদ্ধতার অজুহাতে করে আসা হচ্ছে। সম্পদ আমাদের কম নেই, দরকার সেগুলোকে লুটের মাল বানানো বন্ধ করা।
৬. মধ্যবিত্ত -উচ্চবিত্ত তার সন্তানদের বাড়িতে পড়াবার জন্য মাসে পাঁচ থেকে বিশ হাজার পর্যন্ত অনায়াসে খরচ করছেন। দরিদ্র মানুষও এক দুই হাজার টাকা নাভিঃশ্বাস তুলে খরচ করতে বাধ্য হচ্ছেন। কেন আমরা শিক্ষার উন্নয়নের জন্য স্বচ্ছল মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চআয়ের মানুষের ওপর শিক্ষাকর বসিয়ে সকলের জন্য একই পদ্ধতির এমন শিক্ষার ব্যবস্থা করছি না যেটা সারা দেশে একই মানের যোগ্য শিক্ষকদের তুলে দেবে শিক্ষার্থীদের সামনে?
পাঠশালাটাকেই এমন বানিয়ে ফেলার প্রস্তাব করুন না, চারদিকের বিপুল চুরিদারির টাকাগুলো শিক্ষায় বরাদ্দ করতে বাধ্য করে এমন আওয়াজ তুলুন না যেখানে নোটবই গাইড বইয়ের চাহিদাটাই উধাও হয়ে যাবে! এমন শিক্ষানীতি নিন যেন বিদ্যালয়গুলোই এমন হয় যেখানে ছেলেটা-মেয়েটা খেলাধূলা করবে, একটা নাশতা আর একটা ভারি খাবার খাবে, আর পড়াশোনার আগাপাশতলা সেখানেই শেষ করে বাড়িতে এসে বাবা-মার সাথে জেগে থাকার বাকি সময়টুকু হেসেখেলে কাটাবে।
****
এ দেশের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার সর্বনাশ করল কে?
– ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, শাহজালাল প্রকৌশল ও বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়
[EXCERPT] “… আমি সবার অগোচরে খুব ধীরে ধীরে লেখাপড়ার উপর যে ‘স্লো পয়জনিং’ হচ্ছে তার কথা বলতে বসেছি।…
সেই যখন থেকে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার দায়িত্ব নিয়ে শিক্ষক হয়েছি তখন থেকে আমি জানি একজন ছেলে বা মেয়ে কী শিখছে তার থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তার শেখার আগ্রহ আছে কি না? শেখার ক্ষমতা আছে কিনা সেই বিষয়টি। এই দেশের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া নিয়ে আমার দুঃখের সীমা ছিল না। লেখাপড়ার নামে তাদের কিছু জিনিস মুখস্থ করানো হতো, পরীক্ষার হলে গিয়ে সেটা তাদের উগরে দিতে হতো। পড়াশোনার পুরো বিষয়টি ছিল খুব কষ্টের, কারণ মানুষের মস্তিষ্ক তৈরি হয়েছে বোঝার জন্যে, জানার জন্যে কিংবা বিশ্লেষণ করার জন্যে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন মনে রাখার বিষয়টা মানুষের থেকে ভালো পারে শিম্পাঞ্জিরা!
তাই প্রথম যখন সৃজনশীল পদ্ধতির পরীক্ষার বিষয়টি সামনে এসেছিল আমার আনন্দের সীমা ছিল না। (তখন অবশ্য সেটাকে বলা হতো কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন পদ্ধতি, কিন্তু কাঠামোবদ্ধ নামটাকে কেমন যেন কটমটে মনে হয়েছিল বলে এর নামটাকে পাল্টে সৃজনশীল করে দেয়া হয়েছিল) যাইহোক সৃজনশীল প্রশ্নের মূল বিষয়টা ছিল খুবই সহজ, এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্যে আর কখনো ছাত্র-ছাত্রীদের কিছু মুখস্ত করতে হবে না। তারা যদি পুরো বইটা মন দিয়ে পড়ে তাহলেই হবে, প্রশ্নগুলোর উত্তর তারা ভেবে ভেবে দিতে পারবে। নতুন কিছু শুরু করা খুবই কঠিন, এখানেও সেটা দেখা গেল। সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি শুরু করা মাত্রই অভিভাবকেরা এর পিছনে লেগে গেলেন। স্বার্থপর অভিভাবকদের একটি মাত্র কথা, ‘স্বীকার করি এটা খুবই ভালো পদ্ধতি, কিন্তু আমার ছেলে কিংবা মেয়ে আগের পদ্ধতিতে পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে যাক তারপর এই পদ্ধতি প্রবর্তন করা হোক!’
তারা সৃজনশীল পদ্ধতির বিরুদ্ধে রীতিমতো আন্দোলন শুরু করেছিলেন! আমার মনে আছে আমরা যারা ছাত্র-ছাত্রীদের মুখস্থ করার যন্ত্রণা থেকে উদ্ধার করার এই সুযোগটা পেয়ে লুফে নিয়েছিলাম তারা সবাই মিলে সেটাকে রক্ষা করার জন্যে উঠে পড়ে লেগে গিয়েছিলাম। রীতিমতো যুদ্ধ করে শেষ পর্যন্ত সারা পৃথিবীর ছেলেমেয়েরা যে পদ্ধতিতে (Bloom’s Taxonomy) লেখাপড়া করে, আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরাও সেই পদ্ধতিতে লেখাপড়া করার এবং পরীক্ষা দেওয়ার একটা সুযোগ পেল। অন্যদের কথা জানি না আমি খুব আগ্রহ নিয়ে আপেক্ষা করতে থাকলাম কখন এই ছেলেমেয়েগুলোকে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার নিজের ছাত্রছাত্রী হিসেবে পাব। কারণ এই ছাত্রগুলোর মস্তিষ্কগুলো থাকবে সতেজ, তীক্ষ্ণ এবং সৃজনশীল, মুখস্থ করিয়ে করিয়ে সেগুলোকে ভোঁতা করিয়ে দেওয়া হবে না।
কিছু দিনের ভেতরে আমি প্রথম দুঃসংবাদটি পেলাম- সেটি হচ্ছে সৃজনশীল প্রশ্নের গাইড বই বের হয়ে গেছে। খবরটি ছিল আমর কাছে অবিশ্বাস্য, কারণ সৃজনশীল প্রশ্নটাই করা হয়েছে যেন ছাত্র-ছাত্রীদের আর প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করতে না হয় সেজন্যে। তার থেকেও আরো ভায়াবহ ব্যাপার ঘটতে থাকল, শুধু যে বাজারে গাইড বই বের হতে থাকল তা নয়, আমাদের দেশের বড় বড় পত্রিকাগুলোও ‘শিক্ষা পাতা’ বা এ ধরনের নাম দিয়ে তাদের পত্রিকায় গাইড বই ছাপাতে শুরু করল! এগুলো হচ্ছে সেই পত্রিকা যারা এই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার তীব্র সমালোচনা করে মুখে ফেনা তুলে ফেলে।
দেশের দুর্নীতির বিরুদ্ধে রীতিমতো সংগ্রাম করে, পত্রিকায় মূল কাজ সংবাদ ছাপানোর পাশাপাশি তারা জ্ঞান-বিজ্ঞান-আর্ট-কালচার নিয়ে ঠেলাঠেলি করে দেশেকে এগিয়ে নেওয়ার জন্যে জান কোরবান করে দেয়! আমার খুব ইচ্ছে এসব পত্রিকার ‘মহান’ সম্পাদকদের সঙ্গে কোনোদিন মুখোমুখি বসে জিজ্ঞেস করি তারা কেমন করে এই দেশের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এতো বড় প্রতারণা করেন? (আমার মনে আছে আমি কোনো একটি লেখায় এই ধরনের একটা পত্রিকার গাইডবইয়ের উদাহারণটি তুলে জিজ্ঞেস করেছিলাম, যদি গাইড বই ছাপানো বেআইনী হয় তাহলে পত্রিকায় গাইড বই ছাপানো কেন বেআইনী হবে না? আমরা কেন এই পত্রিকাগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারব না?)
যাই হোক, বাজারে এবং দৈনিক পত্রিকায় গাইড বই বের হওয়ার পর থেকে অনেক শিক্ষকই স্কুলের পরীক্ষায় এই গাইড বই থেকে প্রশ্ন তুলে দিতে শুরু করলেন। সেই সব শিক্ষকদের ছাত্র-ছাত্রীদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল, এক সময় শুধু পাঠ্যবইয়ের প্রশ্নগুলোর উত্তর ‘মুখস্থ’ করলেই চলতো, এখন তাদের তার সঙ্গে সঙ্গে পুরো গাইড বইয়ের প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করা শুরু করতে হলো। আমি পড়লাম মহাবিপদে, এই দেশের ছেলে-মেয়েদের অনেকেই জানে আমি এই সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি যেন শুরু হতে পারে তার জন্যে অনেক চেঁচামেচি করেছি, তারা সরাসরি আমাকে অভিযোগ করতে শুরু করল। আমি তখন তাদের বুঝিয়ে বলতাম যদি দুই নম্বরী শিক্ষক হয় তাহলে সৃজনশীল গাইড বই পড়ে হয়তো স্কুলের পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব হতে পারে।
কিন্তু পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি কিংবা এইচএসসির প্রশ্নগুলো কখনোই কোনো গাইড বই থেকে আসবে না। পরীক্ষার আগে এই প্রশ্নগুলো প্রথমবার তৈরি করা হবে, কাজেই যারা গাইড বই মুখস্থ করবে সত্যিকারের পরীক্ষায় তাদের কোনোই লাভ হবে না। বরং উল্টো ব্যাপার ঘটবে, মুখস্থ করে করে পরীক্ষা দেওয়ার কারণে তারা আসল পরীক্ষাগুলোতে নিজে নিজে ভাবনা চিন্তা করে প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যাবে।
এতো ছিল আমি ছাত্র-ছাত্রীদের এভাবে বুঝিয়ে এসেছি এবং তারাও আমার যুক্তি মেনে নিয়েছে। এই বছর হঠাৎ করে আমি প্রথমবার সত্যিকারের বিপদে পড়েছি। আমার কাছে একজন এসএসসির বাংলা প্রশ্নপত্র পাঠিয়েছে, সেই প্রশ্নে গাইড বই থেকে হুবহু প্রশ্ন তুলে দেয়া আছে। প্রমাণ হিসেবে সে গাইড বইয়ের পৃষ্ঠাগুলোও ফটোকপি করে দিয়েছে। ২০১৪ সালে যখন এইচএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে শুরু করল তখন কিছুতেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্বীকার করতে রাজি হয়নি যে ব্যাপারটি আসালেই ঘটেছে। আমি এবারে এসএসসির প্রশ্ন ও গাইড বইয়ের প্রশ্ন পাশাপাশি দিয়ে দিচ্ছি, পাঠকেরা নিজের চোখেই দেখতে পাবেন। শুধু এই দু’টি নয়, আরো অনেকগুলো প্রশ্ন রয়েছে, লেখার শেষে আমি লিংক দিয়ে দিচ্ছি, যার ইচ্ছে ডাউনলোড করে সেগুলো নিজের চোখে দেখে নিতে পারবেন।
এর চেয়ে ভয়ংকর কোনো ব্যাপার কী কেউ কল্পনা করতে পারবে? যারা গাইড বই ছাপায় আনন্দে তাদের বগল বাজানোর শব্দ কী সবাই শুনতে পাচ্ছেন? সেই শব্দ কী শিক্ষাবোর্ড বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় পর্যন্ত পৌঁছাবে? এই গাইড বই বিক্রেতারা কী এখন খবরের কাগজ, রেডিও, টেলিভিশনে বড় বড় করে বিজ্ঞাপন দিতে পারবে না? সেখানে তারা ঘোষণা করবে, ‘আমাদের গাইড বই বাজারের সেরা, এখান থেকে এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্ন বেছে নেয়া হয়!’
যত স্বপ্ন ও আশা নিয়ে সৃজনশীল পদ্ধতি শুরু করা হয়েছিল আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতার (নাকি দুর্নীতি?) কারণে এখন কী পুরো বিষয়টা অর্থহীন হয়ে দাঁড়াচ্ছে না? শিক্ষা বোর্ডের কাছে নিশ্চয়ই রেকর্ড রয়েছে । তারা খুব ভালোভাবে জানেন কারা এই প্রশ্ন করছে, আমরা কী আশা করতে পারি না, যেসব প্রশ্নকর্তা এই দেশের লক্ষ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রীর লেখাপড়ার পুরোপুরি সর্বনাশ করে দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে একটা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে ভবিষ্যতে যেন আর কখনোই এরকম ঘটনা না ঘটে তার একটি গ্যারান্টি দেবেন? কারা প্রশ্নফাঁস করছে তাদের কখনো ধরা যায়নি, কিন্তু কারা গাইড বই থেকে প্রশ্ন নিয়ে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন প্রণয়ন করেন তাদের ধরতে তো কোনো সমস্যা নেই! মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী যেভাবে জোড় হাত করে খালেদা জিয়ার কাছে অনুরোধ করেছিলেন এসএসসি পরীক্ষার সময় হরতাল না দিতে, আমি ঠিক একইভাবে জোড় হাত করে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করব এসএসসি পরীক্ষায় গাইড বই থেকে প্রশ্ন তুলে না দিতে।
গাইড বই থেকে তুলে দেয়া প্রশ্ন দিয়ে তৈরি করা এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নের পাশাপাশি ভিন্ন আরো একটি প্রশ্নপত্র আমার হাতে এসেছে। এই প্রশ্নটি জাতীয় কারিকুলামে ইংরেজি মাধ্যমের পদার্থ বিভাগের প্রশ্নপত্র। প্রশ্নপত্রটির খানিকটা অংশ আমি এই লেখার সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। জানি না সেটা পত্রিকায় দেখানো সম্ভব হবে কী না। লেখার শেষে আমি এটারও লিংক দিয়ে দিচ্ছি যে কেউ সেটা ডাউনলোড করে পুরোটা দেখে নিতে পারবেন।
এসএসসি পরীক্ষায় গাইড বই থেকে নেয়া প্রশ্ন দেখে আমি ক্ষুব্ধ হয়েছি। কিন্তু ইংরেজিতে লেখা পদার্থ বিজ্ঞানের এই প্রশ্নটি দেখে লজ্জায় আমার মাথা কাটা গিয়েছে। একটা এতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় ইংরেজি ভাষার এই নমুনা দেখেও আমার বিশ্বাস হতে চায় না, কেমন করে শিক্ষাবোর্ড ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে এই প্রশ্ন তুলে দিল? প্রত্যেকটি প্রশ্ন ভুল ইংরেজিতে লেখা, ছোটখাটো ভুল নয়, উৎকট ভুল।
যেমন, Who is invented air pump? How many power of an electric fan? Which mirror use of solar oven? ইত্যাদি ইত্যাদি।
প্রশ্নটি দেখেই বোঝা যায় এটি আসলে চরম হেলা ফেলার একটা উদাহারণ। ইংরেজি কারিকুলামের প্রশ্ন করার জন্যে শুদ্ধ ইংরেজি লিখতে পারে এরকম একজন শিক্ষক এই দেশে নেই, তা হতে পারে না। এর অর্থ যারা এর দায়িত্বে আছেন তাদের লজ্জা শরম বলে কিছু নেই- আমরা যারা এটা দেখি তারা লজ্জায় মুখ দেখাতে পারি না, যারা এই কাজটি করেন তারা একটুও লজ্জা পান না, বরং বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ান।…”
FULL ARTICLE HERE: http://opinion.bdnews24.com/bangla/archives/25850
Nothing good can happen to this country, we raped education system, severely molested dignity of literate person, harassed social justice…. and you are talking about secondary and higher secondary board question!? my university teacher writes worst English than this….
শ্রদ্ধেয় জাফর ইকবাল এবং ফিরোজ আহমেদ কে বলছিঃ আগের দিন আমি এ নিয়ে কিছু মন্তব্য লিখেছিলাম । ফিরোজ ভাই যে কথাগুলি লিখেছেন তা সময়ানুগ এবং যুক্তি নির্ভর। আমার দেশের অভিজ্ঞতা বলি—-এখানে সরকারি ব্যাবস্থপনায় মিদ দে মিল চালু হয়েছে প্রায় ২ দশক। কিন্তু তার ফল বিশেষ দেখা যাচ্ছে না । এখন আবার ক্লাস এইট পর্যন্ত পাশ–ফেল তুলে দেওয়া হয়েছে ।পরিণতি ওই অষ্টম মানের পরে ব্যাপক হারে স্কুল ড্রপ –আউট। এরাজ্যে একজন উচ্চ ও উচ্চতর বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাসে ৬০০০ ০ থেকে ৮০০০০ টাকা বেতন পান।তবুও তাঁদের টাকার খাঁই মেটেনা । প্রাইভেট টিউশন /ইন্স্যুরেন্সের এজেন্সি /জমি ও ফ্ল্যাটের দালালি ইত্যাদি বহুতর বাড়তি পেশায় তাঁরা ব্যাস্ত থাকেন । শুধু স্কুলে গিয়ে পড়াতেই তাঁদের আপত্তি। কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় গুলির অবস্থাও তথৈবচ । সেখানেও নোট পড়ানোর বন্দোবস্ত । সে নোট ছাত্ররা নিজেরা লেখে না ।শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা ৭০/৮০ দশকের বস্তাপচা থিয়োরি হাতে ধরিয়ে দেন । ছাত্ররা তা জেরক্স করে নিয়ে ফাইলে গুঁজে রাখে। এই অবস্থা দেখছি বিগত ৩০ বছর যাবত । আপনাদের ওখানে তবু এসব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এদেশে এসব নিয়ে কারুর মাথা-ব্যাথা নেই । প্রথম সারির ছাত্ররা কেউ শিক্ষকতায় আসে না। কারণ স্কুল–কলেজ–বিশ্ব বিদ্যালয়ের চাকরি কিনতে হয় ১০/২০/৫০ লাখ খরচ করে । জানিনা কোথায় চলেছি আমরা ।
আমি মুহম্মদ জাফর ইকবালের ভক্তগোষ্ঠীর কেউ নই। আবার অহেতুক নিন্দুকও নই। ফিরোজ আহমেদের লেখাটা কিন্তু আসতে পারতো ড. ইকবালের লেখার সম্পূরক হিসেবে। এতে করে এই ইস্যু নিয়ে বলা কথাগুলো পূর্ণতা পেতো। তা না করে ফিরোজ আহমেদ বিজ্ঞানীদের সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কেও কিছু ধারণা না থাকাটাকে অপরাধ হিসেবে দেখলেন, সেটা পরিষ্কার হয়নি। বরং মনে হয়েছে, গরিব গেরস্ত কেন আধুনিক নিরাপত্তাব্যবস্থা বসায়নি, এই কারণে চুরি হওয়ার দায় পুরোটাই তার, চোরের নয় মোটেও।
মুহাম্মদ জাফর ইকবাল যেহেতু সমাজের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখালেখি করেন তাই তার সমাজ বিজ্ঞান সম্পর্কে ধারনা থাকাটা খুব জরুরী। বিশেষ করে তার মতো প্রভাবশালী লেখকরা যখন একটা সংকটের ভুল ব্যাখ্যা সমাজের সামনে হাজির করেন তখন তা সংকট উত্তরনে সহায়তা না করে সংকটকে আরো গভীর কতে তোলে।
আজকের দিনে কোন স্কুলের শিক্ষক মাসে ৬০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা বেতন পান দয়া করে জানাবেন কি?
ami amer nejer kotha boli, ami dhaka er ekta school thake 2006 e SSC pass kori…oikhaner kisu teacher onek valo poraten. kintu kisu teacher guide boi dakhe math & others poraten (kisu e bujhaiten na). & tader kase privet porer jonno nana vabe class e jontrona korten. akhon amer soto bon oi school e portase, akhonker obostha aro kharap hoise. kisu altu faltu boi force kore student der kinano hoy (eisob boi gula valo expensive)….ja kinanor por r use hoy na.! pore aber asol boi kinte hoy.
r ami kisu ovivabok o dakhi jara tader bacchader competition dea teacher er basay pathen. ek subject er jonno 2/3 jon teacher at a time. ami amon onek student dakhsi jara GPA 5 paise kintu nejer school er nam o thik moto likhte partase na.
amader dash er manus er degree bartase kintu education er level bartase na. er jonno education system change kora uchit. Aro ekta baper akhon ter paitasi j Honors complit kore o kono ekta suitable job e apply porjonto korta partasi na, maximum e 3rd class job.
amon onek job dakthasi jar jonno HSC pass e enough but chaitase MS. ei bapar gula o akhon amer kase incompatible mone hoitase.
aro onek problem ase….koyta r bolbo…!? jodi ami ekta problem o solve korte partem…!!
Very well replied. But I think he missed on a big point. The system in a way is oppressing the student to take their certificates as a way to get the jobs and become successful in life, earn money and etc. But should not be the real aim of education, education is for gaining knowledge and implementing them in real life. As the goals of earning education have changed, now people are looking for shortcuts to get that certificate. Does not really matter, you understand a problem or not, but you should know how to do it in the exam and earn marks. That is what is more important to us now-a-days. So guide books provide an ultimate solution for such desires, you get a collection of solved problems, you solve them 1000 times at home or at tuitions, then just vomit it in the exam. Earn your marks, get the certificate, then you are good to get a job.