রবি: আমাদের অশ্রু এতো শস্তা না

রবি: আমাদের অশ্রু এতো শস্তা না

Irfanur Rahman for Alal O Dulal

রবির বিজ্ঞাপনটা সুন্দর, অত্যন্ত হৃদয়স্পর্শীভাবেই সুন্দর, বিশেষত “একটা মোবাইলের জন্য মরে যাবো না বাবা” বলার পর মোরশেদ সাহেবের মেয়ে যেভাবে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে আমার ধারণা অই জায়গাটায় অনেকের চোখেই পানি এসে গেছে। 

 
আমি সামান্য আবেগগ্রস্ত হয়েছি, তবে চোখে পানি আসতে দেই নাই, কেনো দেই নাই তার একটা কারণ আছে। 
 
বাঙালি মধ্যবিত্ত সততাকে মূল্যবান মনে করতো আশির দশক পর্যন্ত, ষাট থেকে আশি পর্যন্ত বর্ডারের দুই দিকেই যেসব চলচ্চিত্র বা সাহিত্য নির্মিত হয়েছে, তাতে এই ব্যাপারটা দেখতে পাবেন। আশির দশকেনিওলিবারালাইজেশন এসে একটা কাজ করেছে, দুর্নীতি আগেও ছিলো, কিন্তু আগে কখনো সততা হাস্যকর ছিলো না। 
 
নিওলিবারালাইজেশন প্রাইভেট সেক্টরের বিকাশকে উৎসাহিত করে, এর জন্য পাবলিক সেক্টরকে ডেমনাইজ করা দরকার, তাই পাবলিক সেক্টর যতো দুর্নীতিগ্রস্ত হবে ততোই তার জন্য সুবিধে। অনেকের মনে হতে পারে রবি ব্যাপারটা চ্যালেঞ্জ করছে, আমিও একটু অবাকই হয়েছিলাম অপ্রত্যাশিত বিজ্ঞাপনটি দেখে, তবে একটু মাথা খাটিয়েই ধরতে পারলাম আসলে ব্যাপারটা কি। রবি এই রমজানে মোরশেদ সাহেবদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে, ‘ব্যাক হ্যান্ডেড কমপ্লিমেন্ট’ এটা, রবি ভালো করেই জানে মোরশেদ সাহেবরা একটা রেয়ার স্পিসিজ, যতো দিন যাচ্ছে এরা ততোই সংখ্যালঘু হচ্ছেন। 
 
এই বিজ্ঞাপন দেখে কেউ সৎ হবেন না, যারা অতীতের সৎ মানুষ, তাঁরা কিছুটা নস্টালজিক ফিল করতে পারেন বড়োজোর। দুর্নীতি এখানে শাসকদের সংস্কৃতি ও জীবনধারণের পদ্দতিতে পরিণত হয়েছে, ব্যাপারটা দুধেভাতে থাকার না, ব্যাপারটা অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার। এরা মানুষের চোখের পানিকেও ব্যবসার বিষয় বানাচ্ছে। যাকে তাত্ত্বিক পরিভাষায় পলিটিক্যাল ইকোনমি অফ টিয়ার্স বা অশ্রুর অর্থশাস্ত্র বলা যেতে পারে। 
 
দুর্নীতি অবশ্যই অন্যায় এবং এর বিরুদ্ধে আমাদেরকে রুখে দাঁড়াতেই হবে, কিন্তু যেই রাষ্ট্রে গোটা শাসকগোষ্ঠীই ডুবে আছে দুর্নীতির মধ্যে (মোর্শেদ সাহেবের কলিগরা ছোটো খাটো দুর্নীতি করে, বড়ো বড়ো দুর্নীতিকে দুর্নীতিই মনে হয় না, ওগুলোকে এদেশে দেশপ্রেমের নামে হালাল করা হয়) তার সাথে মিলে মিশে ব্যবসা করা রবির মতো কর্পোরেট্রা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কমরেড হতে পারে না। 
 
যারা নির্মাণ করেছেন তাঁদের সৃষ্টিশীলতার তারিফ করতে হয়, এই সৃষ্টিশীল মানুষগুলোকে ধারণ করতে না পারা (না পারাতেই তাঁরা কর্পোরেটদের জন্য কাজ করছেন, পারলে, আমাদের জন্য করতেন) বাংলাদেশের বিপ্লবী রাজনীতির একটি সীমাবদ্ধতা, তবে সীমিত পরিসরে হলেও গণসংহতি আন্দোলনের মতো ছোট-কিন্তু-সম্ভাবনাময় দলগুলো এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চালাচ্ছে।
 
আমাদের অশ্রু এতো শস্তা না মনে হয়।
 

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s