
পার্বত্যচুক্তি বাস্তবায়ন : আবার অপেক্ষার পালা
প্রথমেই পার্বত্যচুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চেৌধুরীর পার্বত্যচুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে দেড় বছরের ব্যবধানে দুইটি বক্তব্য :
১. পার্বত্যচুক্তি বাস্তবায়নের আলোচনা একদম শেষ পর্যায়ে। এ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। এবার আমরা ফলাফল চাই। (সূত্র: প্রথম আলো, শেষ পৃষ্ঠা, ২৭ ডিসেম্বর ২০১০ ইং, স্থান : খাগড়াছড়ি)
২. সরকার ত্ত জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) মথ্যে চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়ে কোনো মতভিন্নতা নেই। আমরা একই লক্ষ্যে পেৎৌছাতে চাই।সেই উদ্দেশ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আমরা একেবারে শেষ পর্যায়ে পেৎৌছে গেছি। (সূত্র: প্রথম আলো, তৃতীয় পৃষ্ঠা, ২৯ মে ২০১২ইং, স্থান: ঢাকা)
প্রিয় বন্ধুরা, আপনারা যদি বেগম সাজেদা চেৌধুরীর বক্তব্য দেয়ার সময় দুইস্থানে উপস্থিত থাকতেন তাহলে কি মনে করতেন না আরে, এই ক্যাসেটটা তো বছর দেড়েক আগে কোথায় শুনেছি!! অবশ্যই মনে করতেন। আমরা যারা সংবাদের পেছনে ঘুরি তাদের এমন ক্যাসেট বারবার শুনতে হয়। লিখতে হয়। অনেকে হয়তো ভুলে যান। কিন্তু আমরা যারা সংবাদের পেছনে ঘুরার চাকরিটা বাদ দিয়েত্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি প্রত্যাশি, পার্বত্যচুক্তি বাস্তবায়নের প্রত্যাশি তারা দুখ পাই, হতাশ হই। এভাবে দুখ্খটা বাড়তে বাড়তে সরকারের প্রতি, দলের প্রতি আস্থাহীনতার জন্ম নেয়।
যা হোক, গত ২৭ মে পার্বত্যচুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির সভার প্রাক্কালে অমুলক ভাবনা…. শীর্ষক আমার একটি নোটে লিখেছিলাম আমার ভাবনা পর্যবেক্ষন যেন অমুলক হয়। আমি এখনো সেটাই চাই। তবে সত্যি বলছি, আমার ভাবনা পর্যবেক্ষণ খুব কমই অমুলক হয়, তাই লেখার সময়ই আমি সন্দিহান ছিলাম। এখন আরত্ত বেশি সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর কথা শুনে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কৃর্তক দায়িতপ্রাপ্ত হত্তয়ার পরত্ত যদি সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রধানমন্ত্রীর উপর নির্ভরশীল হন তাহলে চুক্তি বাস্তবায়নে তার শারীরিক ভাষা বা কনফিডেন্স লেবেলটা বুঝে নিতে হবে। তিনি অন্তত দু’টি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে বলেছেন। তার মানে তিনি যে পার্বত্যচুক্তি বাস্তবায়ন বিষয়ে জনসঙহতি সমিতির প্রধানের সঙ্গে কথা বলবেন সে বিষয়ে মোট্ই হোমত্তয়ার্ক করেননি। আর যে কোনো ছাত্রের হোম ত্তয়ার্ক না করাটা হয় অমনোযোগিতার লক্ষণ অথবা ক্লাশটাকে গুরুত্ব না দেয়া। এমন একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বসার আগে হোমত্তয়ার্ক না করা মানে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব এবং তা বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা। তার মানে পার্বত্যচুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়টা সরকারের অগ্রাধিকারে নেই। থাকলে কথন কী হবে, কীভাবে হবে তা নিশ্য়ই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে আসতেন। এমন অমনোযোগিগতার মানে কী?
আমার মনে আছে, ২০১০ সালের ২৬ ডিসেম্বর যখন খাগড়াছড়ি সার্কিট হাউসে চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির সভা চলছিল তখন পার্বত্যচট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন চেয়ারম্যানের এক তরফা শুনানির প্রসঙ্গটি আসার পর তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন এবং ভূমি কমিশন আইন সংশোধন না হত্তয়া পর্যন্ত ভূমি কমিশনের কার্যক্রম স্থগিত রাখার কথা বলেছিলেন। কিন্ত বাস্তবে গত দেড় বছর আমরা কী দেখতে পাচ্ছি। ভূমি কমিশনের একগুয়ে চেয়ারম্যানকে কি তার অগণতান্ত্রিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখতে পেরেছেন। নাকি আইনটি সঙশোধন করেছেন। সেই সময়ে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির শুনানি বাতিল এবং আইন সংশোধনের বিষয়ে ফুসে উঠা জনগণকে শান্ত করতে এবং বৈঠকে সন্তু লারমাকে শান্ত করতে সেটা করা হয়েছিল বলে আমরা ধরে নিতে পারি। সেকারণে আমার গত নোটে লিখেছিলাম, যত শক্তিশালী ব্যক্তি হোক না কেন, যদি কনফিডেন্স লেবেললটা না থাকে তা হলে তার কথার বার বার হেরফের হয়। এ ক্ষেত্রে সাজেদা চেৌধুরী তথা সরকারের ক্ষেত্রেত্ত তাই হচ্ছে বলে মনে হয়। যার কারণে দেড় বছরে আমরা এক কদম এগোতে পারিনি। সেই একই ক্যাসেট বাজানো হলো।
সভা শেষে জনসংহতি সমিতির প্রধান, আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান সন্তু লারমা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বলেছেন, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চুক্তি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত কমিটি নিয়েছে, তা বাস্তবায়নে কার্যক্রম দৃশ্যমান হতে হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে সন্তু লারমার সঙ্গে একমত। কিন্তু সেই দৃশ্যটা কথন কীভাবে দেখা যাবে। সেটা কী দূরবীণ দিয়ে দেখতে হবে, না খোলচোখে দেখা যাবে? সেটা কী বারবার খুজতে হবে, হাত পাততে হবে, নাকি অঙ্গীকার মতো দেত্তয়া হবে? সে বিষয়ে জানার আগ্রহ থেকে গেল।
এখানে একটা বিষয়ে খুবই আশ্চর্য হতে হয়। সেটা হল অনেক আগে থেকে শুনে আসছি ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন সংশোধনে সরকার জনসংহতি সমিতি একমত হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ে নাকি ভেটিংত্ত হয়ে গেছে। তাহলে আবার কেন তা ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে! এটা তো কালক্ষেপনের চূড়ান্ত দুষ্টান্ত। এই বাজেট অধিবেশনে বিলটি উত্থাপিত হবে কি না তার নিশ্চয়তা দিতে পারেননি পার্বত্যচুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান। পৃথিবীর কোনো দেশে একটা বিল সংসদে উত্থাপনে কত বছর সময় ব্যয় হয়? আমার মনে হয় গিনেসবুক কৃর্তপক্ষের কাছে সরকার আবেদন করতে পারে যে, কোনো বিল সংসদে উত্থাপনের জন্য কত সময় ব্যয় হয় তা খটিয়ে দেখতে। তাতে দেখা যাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন সংশোধন বিল রেকর্ড করে ফেলেছে এবং গিনেসবুকে স্থান পাবার যোগ্য হয়েছে।
এবার আসি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির পার্বত্যচুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের কথায়। গত বছরের নভেম্বর মাসে ঘোষিত আন্দোলন কর্মসূচি চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে এ বছরের মার্চ মাসে স্থগিত করা হয় এ মাস অর্থাৎ মে পর্যন্ত। পরশু শেষ হচ্ছে সে সময়সীমা। এরপর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে কিনা তা জনসঙহতি সমিতির কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারিনি। তবে যতটুকু শুনেছি সে ব্যাপারে দুইটি মত রয়েছে। এখন নিশ্ছয়ই দলীয় সিদ্ধান্ত একটা আসবে। আমরা সেই সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকলাম।
আমাদের শারীরিক ভাষা বা কনফিডেন্স লেবেলটা যদি দেখাতে না পারি সরকার ক্যাসেটটা খুলে নতুন গান শুরু করবে বলে আমি মনে করতে পারছি না। তাই সময় এসেছে নতুন কিছু করার, নতুন কিছু পাত্তয়ার…..
আর কত অপেক্ষার পালা……..