
জিয়া হাসান: “আজকে যদি এই রাষ্ট্রে একটা মানবিক এবং নৈতিক সরকার থাকতো, তবে তার দায়িত্ব হতো, তোবা গ্রুপের সকল ডাইরেক্টরদের স্থায়ী অস্থায়ী সকল ধরনের সম্পদ এবং মেশিন বিক্রয় করে, এই গ্রুপের শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা।”
তোবা গ্রুপের ১৬০০ শ্রমিকের তিন মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবীতে, শ্রমিকেরা অনশনে আছেন। অনেকে মৃত্যু শয্যায়। এইটা তাদের জন্যে কোন আব্দার নয়, বেচে থাকার তাগিদে তাদের শ্রমের মজুরী আদায়ের প্রশ্নে মরণের ঝুঁকি।
বন্ধুদের স্ট্যাটাস মারফৎ জানতে পারলাম, মালিক পক্ষ বলছেন তারা বেতন দিবেন না,যতক্ষণ না তাজরিনের মালিকের মুক্তি দেয়া না হয়।
জেনে অবাক হইলাম, এই লোকের এখনও মৃত্যুদণ্ড হয় নাই। অনেক আগেই, এই লোকের ফাসি হয়ে , তার সকল সম্পদ বেচে যে ক্রোক হয়ে যায় নাই সেইটাই এই রাষ্ট্রের আদি অপরাধ।
শ্রমিকদের শাস্তি দিয়ে, বিচার বিভাগকে ব্ল্যাকমেল করার মত এই ধরনের চিন্তা যেই গার্মেন্টস কতৃপক্ষ করতে পারে, তার এই দেশের মাটিতে একটা লাভজনক প্রতিষ্ঠান চালানোর অধিকার নাই। কারন , মানব হত্যার দায়ে বিচারে সে জেলে আছে। সে দায়ী কি দায়ী নয়, সেইটা নির্ধারণ করবে কোর্ট।
আজকে যদি এই রাষ্ট্রে একটা মানবিক এবং নৈতিক সরকার থাকতো, তবে তার দায়িত্ব হতো, তোবা গ্রুপের সকল ডাইরেক্টরদের স্থায়ী অস্থায়ী সকল ধরনের সম্পদ এবং মেশিন বিক্রয় করে, এই গ্রুপের শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা।
কিন্তু, সেইটা করার সক্ষমতা এই রাষ্ট্রের অনৈতিক পরিচালক এবং অক্ষম বিচার বিভাগের নাই। সারা বিশ্বের নজরদারি থাকার পরেও, রানা প্লাজার ১১৮ কোটি টাকার অনুদান বিলি করার অক্ষমতা বলে দেয়, এই রাষ্ট্রের পরিচালকদের অযোগ্যতা এবং মানসিকতা কোন পর্যায়ে।
এবারে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেননি তোবা গ্রুপের তিন হাজার শ্রমিক। ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেনি অবরুদ্ধ গাজার লাখ লাখ মানুষ। ২০১২ সালে তোবা গ্রুপের তাজরীন কারখানা পুড়ে শতাধিক শ্রমিক মারা যান এর মালিক দেলোয়ার হোসেনের অবহেলার কারণে। ঘটনার দেড় বছর পার হলেও নিহত শ্রমিকদের পরিবার ও আহত শ্রমিকেরা যথাযথ ক্ষতিপূরণ না পেয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন।
সেই তোবা গ্রুপেরই পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের তিন হাজার শ্রমিক বেতন-বোনাসের দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন গত সোমবার। ঈদের দিনও তাঁরা অনশনে ছিলেন। যেখানে বেতন পেয়েই মানুষের চলা কঠিন, সেখানে তিন মাস বেতন না পেয়ে এই শ্রমিকেরা যে চরম বিপাকে পড়েছেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
টেলিভিশনে আমরা দেখলাম, কারখানা চত্বরে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করছেন। কেউ কেউ হাউমাউ করে কাঁদছেন, আহাজারি করছেন। বাংলাদেশে গরিব শ্রমিকদের কান্না ছাড়া কী আছে? ঈদের আগে সরকারি ও বিএনপির নেতারা আন্দোলন নিয়ে বাগযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন। একে অপরকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। কিন্তু ঈদের দিনে অনশনরত শ্রমিকদের পাশে কেউ দাঁড়াননি। সরকারি বা বিএনপির কোনো শ্রমিকনেতাও সেখানে যাননি। শ্রমিকেরা বেতন-বোনাসের দাবিতে কারখানা চত্বরে অনশন করছেন; আর বাড়িতে তাঁদের প্রিয়জনেরা অপেক্ষায় আছেন কবে বেতন-বোনাস নিয়ে তাঁরা বাড়ি যাবেন।

শ্রমিকেরা বলছেন, বিজিএমইএ চাইলে ঈদের আগেই সমস্যার সমাধান করতে পারত। সমাধান করতে পারত হয়তো সরকারও। কিন্তু তারা কেউ এগিয়ে আসেনি। বিজিএমইএ তৈরি পোশাক মালিকদের প্রতিষ্ঠান। তাই বলে তাঁরা শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার তথা বেতন-ভাতার বিষয়টি এভাবে উপেক্ষা করতে পারে না। তোবা গার্মেন্টসের সম্পত্তি বিক্রি করেই যদি শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে হয়, তাহলে সেই উদ্যোগ তাঁরা আগে নিল না কেন? এখন বলছেন, দাম পাচ্ছে না। শ্রমিকেরা কারখানার মালিক দেলোয়ার হোসেনের শাশুড়িকেও কারখানা ভবনে আটকে রেখেছেন। ব্যক্তি হিসেবে তাঁর আটককে আমরা সমর্থন করি না। কিন্তু তিনি যদি তোবা গ্রুপের মালিকদের কেউ হয়ে থাকেন, তাহলে তাঁকেও দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি বলেছেন, কারখানা বিক্রি না করে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা যাবে না। কারখানা বিক্রি করতে দু-তিন মাস দেরি হলে কি শ্রমিকেরা ততদিন না খেয়ে থাকবেন?
বাংলাদেশে একশ্রেণির মানুষ শ্রমিকদের ঘামে-রক্তে গড়া সম্পদের মালিক হলেও সেই শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কিংবা নিরাপত্তা দিতে চান না। এ কারণেই তাজরীন গার্মেন্টস ও রানা প্লাজার ঘটনা ঘটছে। তোবা গ্রুপের তিন হাজার শ্রমিককে যারা আমরণ অনশনে যেতে বাধ্য করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি অবিলম্বে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হবে।
More than 1600 Toba Group RMG workers struggling for their unpaid wages from the owner who is also owner of Tazreen Fashion that caught on fire on November 24, 2012. One would think such tragedy would bring change if not in the industry, at least it would change this particular owners mindset. He is arrested and in jail, still managed to steal 1600 workers wages, who remained unpaid since May. It is Eid-ul-Fitr. BGMEA promised twice for the payment, some so called Trade Union leaders also negotiated but failed. Instead of celebrating Eid with family and friends, they began a fast unto death demanding their three months salary and festival bonus. In solidarity, labor organizers from Garments Workers Unity Forum, Garments Mukti Andolon, Bangladesh Garments Workers Solidarity and many others are there.
তোবা গ্রুপের ৫টি গ্রার্মেন্টস এর ১৬০০ শ্রমিককে বেতন দেয়া হয়নি(খেয়াল করেন, বোনাস নয়, বেতন)। তোবা গ্রুপের অর্থাৎ তাজরিন গার্মেন্টস এর খুনী মালিক দেলওয়ারের জামিন না হলে বেতন দেয়া হবে না বলে শ্রমিকদের ঘোরানো হচ্ছে। মালিক না থাকলে শ্রমিকদের মাসের পর মাস খাটানো যায় কিন্তু বেতন দেয়া যায় না! আসলে শ্রমিকদের জিন্মি করে খুনী মালিকের জামিনের জন্য চাপ প্রয়োগ করতেই এই বাহানা। উপায়ন্তর না দেখে, তোবা গ্রুপের শ্রমিকরা তাদের ৩ মাসের বকেয়া বেতন আদায়ের জন্য আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে অনশনে বসেছেন। বকেয়া আদায় না হলে ঈদের দিনও তারা অনশন করবেন। এদিকে পুলিশ জলকামান ও এক্সট্রা ফোর্স নিয়ে শ্রমিকদের ঘিরে রেখেছে- যে কোন সময় আক্রমণ চালানো হতে পারে শ্রমিকদের উপর। আমরা অবিলম্বে তোবা গ্রুপের শ্রমিকদের বকেয়া বেতন সহ ঈদের বোনাস পরিশোধের দাবী জানাই। হাজার শ্রমিক অভুক্ত রেখে, ঈদ করা চলবে না। শ্রমিকদের সারা মাস খাটিয়ে রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো বেতন-বোনাস না দেয়া মালিক শ্রেণীর ‘খুশির ঈদ’ !
“আমরণ অনশনে তুবা গার্মেন্টস শ্রমিকরা”
“এবারো পোশাক শ্রমিকের নিরানন্দ ঈদ”
— এইসব খবরে কারো ‘খুশীর ঈদ’ যেন মাটি না হয়।

