বুঝলাম, টেনশনে আছি।
কিসের টেনশন ?
অনেক কিছুর।
Diary: Cricket Anxiety
Sayeda Sultana Annee
সকাল সাতটায় ঘুম ভেঙে গেল চনমনে আনন্দে, আহ্ আজ কোন কাজ নেই, আজ কাল রাতে শেষ না হওয়া অরুণ সেন সম্পাদিত ‘সমুদ্রের কবিতা’ পড়বো। হঠাৎ প্রাণটা ধক করে উঠলো , আব্বা ভালো আছেনতো ! খবর নিলাম ভালো আছে।
এরপর একটার পর একটা কাজ মনে পড়তে লাগলো। আজ আমার প্রতিদিনের মতই অনেক কাজ !!
কেন যে ঘুম ভেঙ্গে হঠাৎ ছুটি মনে হলো !
দূরো !
লাউ খোসার ভর্তা, সবজী , ধনে পাতা দিয়ে বেলে মাছ ভুনার মৌখিক রান্না সেরে নামাবলী ছিটের জামা পড়ে দশটার মধ্যে বেরিয়ে পড়লাম । প্রথমেই ডেসকো অফিস। সাবস্টেশন ওয়ালা ভুল করে জটিলতা পাকিয়েছে, ঝারিঝুরি দিয়ে আবার ফিরবো বলে বেরিয়ে এলাম। সাবস্টেশন প্রোভাইডারকে বললাম এক্ষুণি লালমাটিয়া থেকে উত্তরা আসতে।আমি চললাম গুলশান। ক্লায়েন্টের সাথে মিটিং, ব্যাংক সেরে আবার উত্তরা, সাইটে যেয়ে বুঝলাম সাবস্টেশন ওয়ালার ভুলে আমার হাই ভোল্টেজ ক্যাবলে জোরা পড়বে। নাহ্ । হবেনা।আবার ডেসকো অফিস। যাহোক, সমাধান হলো।
এরই মাঝে অস্ট্রেলীয়া থেকে ফোন করেছে কলোনীর ভাই , বন্ধু লিটন।দুশ্চিন্তা তাঁর আমাকে নিয়ে। একটু সাবধান হতে বললো। আমি বললাম, যখন যেখানে দরকার , আমাকে যেতে হবে। যা কর্তব্য করতে হবে। এটা কি নতুন কিছু আমার জন্য ? লিটন বললো , না আপনি বরাবর এমনই। বদলাননি একটুও।
এমনকি ছোট বেলার চেহারাটাও বদলায়নি।
খুশীইইইইই !
বেরিয়ে আরেকটা সাইটে। কিছু কাজ আলোচনা করতেই বেরিয়ে এলো, পয়সা নিয়ে গ্রীল দেয়নি ভেন্ডর।সোজা চললাম তার কারখানায়। উত্তরার পূর্ব দিকটায়। রাস্তা কাটা , হেঁটেই চললাম। ওদিকটা আগে কখনো যাইনি। উত্তরার ঠিক পাশেই মফস্বলের মতো আবহ।হালকা মেঘলা একটা দিন।
পথে এক যাদুকর খেলা দেখাচ্ছে। একটু দাঁড়ালাম। আসলে ভেবেছিলাম সাপখেলা । আহা কতোদিন সাপখেলা দেখিনা।
কাঁকড় বিছানো পথে হাঁটছি। হঠাৎ একটা উত্তেজিত টেলিফোন আলাপে আবার দাঁড়িয়ে পড়লাম। অভব্য কৌতুহলে। ফোন রেখে সে ভদ্রলোক আমাকে বলতে শুরু করলেন, ওনার তিন মেয়েকে তিনি মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছিলেন। নোয়াখালীর
সোনাইমুড়ি গ্রামে।উনি ঢাকায় রড সিমেন্টের ব্যবসা করেন। একবার কোরবানীর ঈদে বাড়ি গেছেন। ছোট মেয়েটি বাবাকে বললো বাবা আমার হুজুর বলছে ছাগলের ছালটা(চামড়াটা) দিতে। ওনার মনে তীব্র ক্ষোভ হলো কোথায় ছোট্ট মেয়েটি বাবার কাছে লাল জামা চাইবে , চাইছে ছাল !! আর উনি শুনেছেন হুজুর মেয়ের গায়ে হাত দেবার চেষ্টা করে। মেয়ে আবার মায়ের মতো সুন্দর !
উনি মেয়েকে মাদ্রাসা থেকে নিয়ে একটা কিন্ডারগার্ডেন এ ভর্তি করিয়েছেন । এখন ঐ কিন্ডার গার্ডেন এর টীচারের সাথে আবার সমস্যা। টীচার ক্লাসে সারাক্ষণ মোবাইলে কথা বলেন, ঠিকমতো পড়াননা। অথচ কেবল চোখবেরকরা বোরকা পরেন।এই দ্বিচারিতার মানে কি ? এটা উনি মানতে পারছেননা।
সর্বশেষ যে সমস্যা নিয়ে উনি রাস্তায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করছিলেন সেটা হলো, মেয়েদের স্কুল ইউনিফর্ম উনি ঢাকা থেকে বানিয়ে নিয়েছেন ,খুব সামান্য রং এর হেরফের , তাই ওদের ক্লাস করতে দিচ্ছে না স্কুল কর্তৃপক্ষ। বাচ্চারা খুব মনোকষ্টে আছে। উনি নিজে কষ্ট পাচ্ছেন ঢাকায় বসে।
যাক , এ মানুষটাকে বললাম আমি ঐ স্কুলে কথা বলবো। এ অন্যায় মেনে নেয়া যায় না।শান্ত হন।
ছুটলাম গ্রীলের দোকানে। পৌছে দেখি মূল মানুষ নাই। ওকে খবর পাঠিয়ে পাঁচটাকার বাদাম কিনে খেতে থাকলাম। মালিক এসে বাদাম খাওয়া রত “মহিলা বদি”কে দেখে তিনদিন সময় চেয়ে নিল।
এই ফাঁকে স্যানিটারি মিস্ত্রি হাজির। ঠিক পাশে ওর বাসা , যেতেই হবে। আমি বললাম চলো।
পৌছালাম নুরুমিয়ার বাসায়। একটা রুম। দুই বাচ্চা নিয়ে থাকে। বউটা বড় লাবণ্যময়ী । ঝকঝকে তকতকে শান্তির সংসার। বিরিশিরির পাহাড়ে আদি নিবাস।চা বিস্কুট খেলাম। আমাকে তাদের ক্ষেতের কালিজিরা চাল দিল।আমি বাউলানী বেশ পোটলা বেঁধে রওনা হলাম । এরপর হলুদমরিচ গুড়া করার দোকানীর সাথে দেশের ভবিষ্যত, তরুণ প্রজন্ম, গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে কথাবার্তা শেষে একটা টাইলস এর দোকানে পেভমেন্ট টালি পেলাম অর্ধেক দামে। সেই সাথে আন্তরিকতা।পথে একটা সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকে পড়লাম আমি।আমার দোষ নেই। কলাবতী ফুল উঁকি দিয়ে ডাকছিল।আমার খুব প্রিয়। দারোয়ানকে অনেক অনুরোধ করলাম একটা ফুল দেবার জন্যে, জলরং এ আঁকবো বলে। দিলোনা।জিজ্ঞেস করলো আমার পরিচয়। আমি বললাম , এবার মেয়র ইলেকশন করবো তো , তাই গণসংযোগ করছি। ওরা বিশ্বাস অবিশ্বাসে তাকিয়ে রইলো।কিন্তু ফুল দিলোনা !
ফিরতি পথে দেখলাম যাদুকর এবার তাবিজ বিক্রি করছে।
আহারে জীবন !
আবার সাইটে। এরপর স্যানিটারি মালামালের দোকানে।তারা তো খুব খুশি। মাত্র তিনদিন আগে নতুন করে দোকান সাজিয়েছেন , আজ ই আমি গেলাম ! কিছু খাওয়াবেনই । ললিপপ আইসক্রিম খেলাম।সাইটে আবার এসডিবি বোর্ডের ডিটেইলিং শেষ করে ঘরে ফিরলাম। সাইট ইঞ্জিনিয়ার এর সাথে পরবর্তী কাজের নির্দেশনা হিসেব নিকেশ শেষে বেডরুমে ফিরে গোসল করলাম মাথায় ঠান্ডা হিমতাজ তেল দিয়ে। এখন মাথা একদম কুল !
ভাবছি , আজ দিনটা এমন পাগলাটে কেন ?
বুঝলাম , টেনশনে আছি।
কিসের টেনশন ?
অনেক কিছুর।
তবে , আজ মূলত ” খেলা” র।
জী।
কালকের খেলায় আমাদের জিততে হবে।
আমরা জিতবো ।
কালকে কোন কাজ করবোনা।
কাল আমার ছুটি।
খেলা দেখার ছুটি।
জয় বাংলা!
আঠার মার্চ , 2015